প্রকাশ: ২০১৮-০৪-৩০ ১২:২৩:২৬ || আপডেট: ২০১৮-০৪-৩০ ১২:২৩:২৬
অকাজের আলাপ
একটা দেশের রাজনীতির মানুষজন কী শব্দ ব্যবহার করেন তা দিয়ে অনেক কিছু বোঝা যে যায়, তা আমরা মানি। তারা ভেবে, বুঝেই, একটা শব্দ ব্যবহার করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না বুঝেও কি রাজনীতির মানুষেরা একটা শব্দ ব্যবহার করতে পারেন? আবার এমন শব্দ কি রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করতে পারেন, দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে যা অপরিচিত বা অধিকাংশ মানুষ সেই শব্দের অর্থ জানে না? যদি এমন শব্দ রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করেন বা ব্যবহারের জন্য বাছাই করেন যে শব্দ দেশের অতিসাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত; তাহলে এটুকু অন্তত বলা যায়, ওই রাজনীতিবিদ বা রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষ শব্দটা বুঝুক তা খুব একটা চাননি। এর পরে, অন্য কোনো উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। কিন্তু রাজনীতিবিদরা না বুঝেই একটা কিছু করে ফেলেন, তা আমি মানতে নারাজ।
যাই হোক, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা এমন অপরিচিত শব্দ হরহামেশা ব্যবহার করেছেন এবং এখনও করেন। অনেকগুলো উদাহরণ আছে এসবের। আমি একটা শব্দ নিয়ে খুব কৌতূহল বোধ করি। কেন এই শব্দটাই আমাদের রাজনীতিবিদরা পছন্দ করে বাছাই করলেন, তা জানার আগ্রহ থেকেই এই পোস্ট। কেউ যদি আমার এই কৌতূহল নিবৃত করতে পারেন, তাহলে তা আমার জন্য আনন্দের হবে।
শব্দটা শিক্ষিত-বাঙালীর মুখে ঠাঁই পেয়েছে, বাংলাদেশের জন্মের সাথে সাথেই। রাজনীতিবিদদের মনোভূমিতে শব্দটা হয়তো আরও আগেই খেলা করতে শুরু করেছিল। শব্দটা হচ্ছে- ‘সংসদ’।
আচ্ছা, বাংলাদেশের ‘জাতীয় সংসদ’ বলে আমরা যে প্রতিষ্ঠানকে জানি তার নাম ‘সংসদ’ কেন? ‘সংসদ’ শব্দটা কি বাংলাভাষার প্রচলিত বা সহজবোধ্য শব্দ? এই দেশটার মালিক যে জনগণ তারা তো সংসদেরও কর্তা। তাদের কাছে কি ‘সংসদ’ শব্দটা চালতি, সরল, সোজা কোনো শব্দ?
আমাদের জাতীয় সংসদের ইংরেজি নাম, সংবিধানেই রয়েছে- ‘হাউস অব দ্য ন্যাশন’। বাংলা ‘জাতীয় সংসদ’। বাংলা-ইংরেজির মিল নাই। থাকতে হবে তার কথাও নাই। কিন্তু ইংরেজি নামটা যতটুকু বুঝি বাংলা ততোটুকুও বুঝি না। কারণ ‘সংসদ’ শব্দটা সহজ, চালু কোনো শব্দ না।
আচ্ছা, এমন প্রতিষ্ঠান ভারতে তো আগে থেকেই ছিল, তার নাম – ‘লোকসভা’। তাদের রাজ্যগুলোর আছে ‘রাজ্যসভা’। আমাদেরটার নাম একটু ভিন্ন কিছু দরকার ছিল। তো, তা হতে পারতো ‘রাষ্ট্রসভা’, ‘জাতীয় সভা’। ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা-পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, গণপরিষদ- এ সবের সাথেও আমাদের ভাব-পরিচয় ছিল, আজও আছে। আমাদের নতুন নাম হতে পারতো ‘লোক-পরিষদ’, ‘দেশ পরিষদ’ বা ‘রাষ্ট্র-পরিষদ’। কিংবা অন্য আর কিছু, যা মানুষ বোঝে। কিন্তু তা হয়নি। হয়েছে ‘জাতীয় সংসদ’! সংসদ! আমি আজও বুঝিনি কেন, কোত্থেকে এই নাম এলো! সাধারণ মানুষ কি বোঝে? আমার ধারণা বোঝে না। শব্দটা আমাদের লোক-সমাজে আজও এতো অপ্রচলিত আর আনকোরা যে তা বোঝার কথাও না।
আমাদের রাজনীতিবিদরা যখন আমাদের সবচে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখতে গেলেন, তখন তারা কী বুঝে নামটা রেখেছিলেন? না কি বোঝাবুঝির রাস্তায় আমাদের রাজনীতিবিদরা হাঁটেননি? কেন হাঁটেননি? এতো বড় একটা যুদ্ধজয় করে ভাষাভিত্তিক একটা জাতি-রাষ্ট্র গঠনের শুরুতে তারা নিশ্চয়ই এই প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে ভেবেছেন। তাহলে? তারা কি চাননি যে সাধারণ মানুষ, তাদের সবচে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে, তার সহজ সরল নামে চিনুক? এটা কি হতে পারে?
Ar Raji’র স্ট্যাটাস থেকে