প্রকাশ: ২০১৮-০৫-১৯ ১২:১৯:৫৭ || আপডেট: ২০১৮-০৫-১৯ ১২:১৯:৫৭
গত ১৫ই মে জয়নাল হাজারী ফেসবুকের লাইভ থেকে একটি ভাষণ দেন । এতে প্রথমেই তিনি সকলকে রমজানের শুভেচ্ছা প্রদান করেন এবং সকলকে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইটের সফল উৎক্ষেপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান তবে বিশেষভাবে সজীব অজেদ জয়কে ধন্যবাদ জানান। বিগত চারদিন ধরে ফেনীর ফতেপুরে যানজট নিয়ে কথা বলেন তিনি বলেন এই অবর্ননীয় দুর্ভোগ মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন মানুষের ওখানে মৃত্যু ঘটে নাই এটাই আল্লাহর রহমত। তবে আজ থেকে ফ্লাইওভারের পশ্চিমাংশ খুলে দেয়ার কথা। তবে বলা হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে আসা গাড়িগুলো ঢাকার দিকে যেতে পারবে কিন্তু ঢাকা থেকে কোন গাড়ি ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যেতে পারবে না। হাজারী বলেন একাংশের অর্থাৎ পশ্চিমাংস দিয়েই আসা-যাওয়ার দুটোই করা সম্ভব কেননা কুমিল্লায় এরকম করা হয়েছিল। কোটা সংস্কারের ব্যাপারে তিনি বলেন ছাত্ররা আন্দোলন স্থগিত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার পক্ষ থেকেও সব কিছু সমনীয় মনে হচ্ছে। সুতরাং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা হওয়াই ভাল।
ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন যেই সিন্ডিকেট ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্ধারণ করত সেটি প্রধানমন্ত্রী ভেঙ্গে দিয়েছেন। এখন আশা করা যায় এই অঙ্গ সংগঠনটি চলার পথে সঠিক দিশা পাবে।
এ প্রসঙ্গে হাজারী চট্টগ্রামের রনিকে কেন্দ্রের কিছু একটা দায়িত্ব দেয়ার অনুরোধ করেন। এই ছেলেটির বিরুদ্ধে কিছু দিন আগে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে তা নজিরবিহীন। বর্তমান সময় সে খুবই জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে চ্যানেল আই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউরকে আজীবন সম্মননা দিয়েছে হাজারী এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন। যে ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল পরিমান অর্থ চুরির সাথে যুক্ত তাকে সম্মাননা দেয়া একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।
তিনি ফেনীসমিতি সম্পর্কে কিছু কথা বলেন আমি এখানে কোন আলোর ইশারা দেখছি না পরিস্থিতি যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।
পরে তিনি জাহাঙ্গীর আদেলের ফাঁসি হবার ব্যাপারে নতুন একটি কারণের উল্লেখ করেন। তাতে তিনি বলেন আদেল সেন্ডিকেট নেতাকে না জানিয়ে ঢাকা থেকে বড় একজন উকিল নিয়োগ করেছিলেন এটা সেন্ডিকেট নেতা ভাল চোখে দেখে নাই। কিছু দিন আগে তালেব আলী হৃদরোগ ইউনিস্টিউটে প্রায় মাস খানেক থেকে চিকিৎসা নিয়ে গেছেন। অথচ সেন্ডিকেট নেতা একবারও তাকে দেখতে যায়নি কিন্তু সেন্ডিকেট নেতা ঘোষণা করেছিল আমি আজীবন তালেব আলীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করব। এরপর হাজারী চাটুকারদের কঠোর সমালোচনা করেন এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন একবার এরশাদের মায়ের মৃত্যুর সময় কাজী জাফর ও মওদুদ আহমেদ সেখানে গেলেন এবং কান্নাকাটি ঝুরে দিলেন কান্না আর থামে না। এক পর্যায়ে এরশাদ বিরক্ত হয়ে দমক দিয়ে বললেন মা তো আমার মারা গেছে আপনারা এমন করছেন কেন? আরেক বার কাজী জাফর প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সংসদে বলে বসলেন এরশাদ লেখা-লেখিতে থাকলে রবীন্দ্রনাথের থেকেও বড় কবি হতেন। এই চাকুকারীতার জন্য সেদিন সংসদে দারুনভাবে মর্মামহ হয়ে পড়েছিলেন এরশাদ। তিনি বলেন এই সব চাটুকারদের জন্যই যুগে যুগে নেতারা বিভ্রন্ত হয়েছে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন সাম্প্রতি আমাদের এলাকায় একজন যুবলীগ নেতা সোনাগাজীর দাগনভূইয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বলে বেড়াচ্ছেন সেন্ডিকেট নেতাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। কোন পর্যায়ের নেতা বানাতে চান তা বলেননি। তাই কেউ কেউ বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী বানাতে চাইলে শেখ হাসিনা কোথায় যাবে? হাজারী বলেন আমি এসব চাটুকারদের ঘৃনা করি। তাই তিনি বলেন আমি কোন চাটুকারকে নয় ফেনী-৩ আসনে জেনারেল মাসুদকে সমর্থন করি।
ভাষণের দিনে রেলমন্ত্রী একসাথে দুটি পুত্রসন্তানের জনক হয়েছে। তাই তিনি রেলমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করেন।
এরপর হাজারী তার বহিষ্কারের প্রসঙ্গটি টেনে এনে বলেন আমাকে কখনো দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। এটা ছিল মিডিয়ার প্রচার। ২০০৫ সালে এই প্রচারণার সময় আমি ছিলাম দেশের বাইরে। কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হলে তাকে কারণ দর্শিয়ে চিঠি দিতে হয়। সেই চিঠি সন্তোষজনক না হলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনাক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আমার ব্যাপারে বা আমার বহিষ্কারের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোন দিন কোন আলোচনাই হয়নি। খবরে বলা হয়েছিল আমি তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেছি। বিষয়টি এমনি মিথ্যা ও বানোয়াট ছিল।
বলা হয়েছিল কোব্বত আহম্মদকে আমি হারিয়ে দিয়েছি। তখন বিএনপি ক্ষমতায় এবং সাঈদ এসকান্দার বিএনপির পক্ষে ঐ নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে প্রশাসনকে ডেকে বলেছিল ফেনী আমার বোনের জেলা এই জেলার পৌর নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হলে কারো চাকরি থাকবে না। তা ছাড়া আমি তখন এমপিও ছিলাম না এবং দেশের বাইরে, ঘোষণা করা হয়েছিল আমাকে দেখা মাত্র গুলি করা হবে। সুতরাং আমার পক্ষে কোব্বত আহম্মদকে জেতানো কি করে সম্ভব ছিল। বরং কুব্বত আহম্মত নিজের রামপুর কেন্দ্রে ২ ভোট পেয়েছিল অথচ আমার নিয়ন্ত্রিত পিটিআই পাইলট হাইস্কুল, আলিয়া মাদ্রাসা ও সরকারি গার্লস স্কুলে ৮০ভাগ ভোট পেয়েছিল। আমি বিরোধীতা করলে আমার নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রগুলোতে বিপুল পরিমান ভোট কিভাবে পেয়েছিল? তবুও একপর্যায়ে তৎকালীন পৌর আ.লীগের সভাপতি শামিমকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি জেলা ও কেন্দ্রকে লিখিতভাবে জানিয়ে বলেছে কোব্বত আহম্মদের পরাজয়ের ব্যাপারে হাজারী সাহেবের কোন সম্পর্ক নাই। কোব্বত আহম্মদও বলেছে আমি কোথায় হাজারী সাহেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি নাই। এ ব্যাপারে প্রেসিডিয়াম মেম্বার শেখ সেলিম ও আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সাংবাদিকসহ অনেক মানুষকে কয়েকবার বলেছে জয়নাল হাজারীর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আ.লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে হয় নাই। ২০০৮ সালে ইকবাল সোবহান মনোনয়ন পাওয়ার পরে তার খালাত ভাই মণি, রেজা, আতাউর ও শাহীনকে নিয়ে নেত্রীর কাছে গিয়েছিলেন হাজারীর বিষয়টি জানবার জন্য।
তিনি বলেছিলেন হাজারীর বহিস্কারের বিষয়ে আমি জানি না। তবে এখন তো সব বহিষ্কারই প্রত্যাহার হয়ে গেছে। সুতরাং কোন বহিষ্কারই নাই। হাজারী বলেন আমি ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর ছিলাম তিনি বলেন বিদেশ থেকে আসার পরে ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে আমি নিম্ন আদালতে ১৪টি মামলার জামিনের জন্য হাজির হই কিন্তু সব মামলায় জামিন দিলেও একটি মামলায় জামিন না দিয়ে আমাকে জেলখানায় পাঠানো হয় সে মামলায় ৯মাস জেলখাটার পর যেদিন আমি ফেনী জেলখানা থেকে মুক্তি পেলাম সেদিনই জেলা আ.লীগের সকল সদস্য ফুল দিয়ে আমাকে অর্ভ্যর্থনা জানায়। ঐ দিনই বিশাল সংবর্ধণা সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন আমরা আমাদের সাধারণ সম্পাদককে ফিরে পেয়েছি। সুতরাং এখন থেকে আমাদের দলীয় কর্মকাণ্ড আরো জোরদার হবে। আমাকে যদি বহিষ্কার করা হতো তাহলে জেলা কমিটির সকল সদস্য আমাকে জেল গেটে অভ্যর্থনা জানালেন কেন? পরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করে বলেন ২০১৩ সালে গণভবনে ফেনী জেলা তৃণমূল আ.লীগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই সভায় জননেত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। এই সভায় তিনি আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং ওই সভায় তাকে নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন বহিস্কার হলে ঐ গুরুত্বপূর্ণ সভায় গণভবনের আমন্ত্রণ পেলাম কিভাবে? তবে তার নিষ্কিয় থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন নেত্রী আমাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেছেন। তিনি আরো বলেন নেত্রীর নির্দেশে আব্দুল জলিল ও রাজ্জাক ভাইয়ের মত লোককেও নিষ্ক্রিয় থাকতে হয়েছিল। ক্ষমতায় আসার দুই তিন বছর পর ওবায়দুল কাদের , আমু ভাই ও তোফায়েল ভাইকে সক্রিয় করা হয়েছিল সুতরাং যে কেউ নেত্রীর ইঙ্গিত পেলে যেকোন সময় সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে হাজারী তার বক্তব্য শেষ করেন।
সূত্র: হাজারীকাপ্রতিদিন।